পুলিশও বাঁচাল না প্রতিবন্ধী সজিবকে | উন্মত্ত হত্যাকাণ্ড
নম্র, ভদ্র আর ভালো ছাত্র বলে এলাকায় পরিচিতি পেয়েছিল জাহিদুল ইসলাম সজিব। এমন ছেলের জন্য পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে প্রতিবেশীদেরও গর্ব, উচ্ছ্বাস ছিল। কিন্তু আড়াই মাস আগে হঠাৎই বিপর্যয় নেমে আসে ওই পরিবারে। সজিব অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে। দ্রুতই স্বজন আর এলাকাবাসী বুঝতে পারে মানসিক প্রতিবন্ধিতা গ্রাস করেছে সজিবকে।
গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে সজিব পাগল হয়ে গেছে। এমন বিপর্যয়ে তছনছ হয়ে যাওয়া স্বপ্ন দূরে ঠেলে পরিবারটি যখন সজিবকে সারিয়ে তোলার নতুন যুদ্ধ শুরু করেছে তখন অমানবিক বীভৎস চরম পৈশাচিক এক ঘটনা ঘটল। সবার অগোচরে বাড়ি থেকে চলে যাওয়া সজিবকে ‘ডাকাত’ বলে পিটিয়ে মেরে ফেলল পাশের গ্রামের কিছু লোক। ছেলে হারানোর মর্মান্তিক খবর ছাপিয়ে গণপিটুনির গা শিউরে ওঠা বর্ণনা শুনে গুমড়ে কাঁদছে পরিবারটি। সহযোগিতা চেয়ে উল্টো পুলিশের অমানবিক আচরণে তারা ভেঙে পড়েছে। তারা এখন সন্তানের এমন পরিণতির জন্য দায়ীদের বিচার চাইছে।
কাপাসিয়া উপজেলার ঘাগটিয়া ইউনিয়নের খিরাটি উত্তরপাড়া গ্রামের জাকির হোসেন মুকুলের সন্তান সজিব। জাকির পাশের খিরাটি বঙ্গতাজ ডিগ্রি কলেজের অফিস সহকারী ছিলেন। পারিবারিকভাবে সচ্ছল জাকির ২০১৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মারা যান। তিন ভাই-বোনের মধ্যে জাহিদুল ইসলাম সজিব ছিল সবার বড়।
স্বজনরা জানায়, জাহিদুল ইসলাম সজিব পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণি থেকে টেলেন্টপুলে বৃত্তি পায় । ২০১৪ সালে ঘাগটিয়াচালা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পাস করে সজিব। এরপর পাশের খিরাটি বঙ্গতাজ ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয় সে। এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে কলেজের নির্বাচনী পরীক্ষায়ও অংশ নিয়েছিল। কিন্তু এরপরই মানসিক সমস্যা দেখা দেয় তার।
সজিবের দাদি শুক্করি বেগম জানান, গত প্রায় তিন মাস আগে হঠাৎ সজিবের আচরণে অসংলগ্নতা ধরা পড়ে। কাউকে দেখলেই ভয় পেতে শুরু করে সে। প্রায়ই বাড়ির পাশে তার বাবার কবরের পাশে গিয়ে বসে থাকত। গুমরে কাঁদত। বেশির ভাগ সময় একা একা কথা বলত। এরপর ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দেয় সজিব। তবে কখনো কারো সঙ্গে খারাপ আচরণ করত না সে।
সজিবের দাদা বলেন, ‘সজিব ইদানীং খুব খেতে চাইত। খাবার নিয়ে গেলে খুশি হতো। হাতে খাবার দেখলে ছুটে আসত। রাতে তার ঘরে সে একাই থাকত। আমরা নিরাপত্তাজনিত কারণে তাকে আটকে রাখতাম। বাইরে থেকে শিকল দিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখতাম। ডাকলেই আমরা ছুটে যেতাম।’
গত ৯ জুন রাতে বারান্দার গ্রিল ভেঙে বেরিয়ে যায় সজিব। পরদিন সকালে সজিবের ঘরে তাকে না পেয়ে ব্যাপক খোঁজাখুঁজি করলেও তার কোনো হদিসই মেলেনি।
সজিবের নানা আরজু মিয়া জানান, গত ১২ জুন মেয়ে রেবেকা সুলতানা রেবা (সজিবের মা) প্রতিবেশী আলমগীর হোসেনসহ তিনি সজিবের নিখোঁজের ঘটনায় কাপাসিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে যান। সাধারণ ডায়েরি করার পর থানায় এক কনস্টেবলের মোবাইল ফোনে ‘গণপিটুনিতে নিহত অজ্ঞাতপরিচয় ডাকাতের’ মরদেহের ছবি দেখে ‘সজিব’ বলে চিত্কার দিয়ে সংজ্ঞা হারান রেবেকা সুলতানা রেবা। তিনিও ছবি দেখে বুঝতে পারেন সব শেষ হয়ে গেছে। তার আদরের নাতির করুণ মৃত্যু হয়েছে।
তাঁরা খবর পেয়ে ছুটে যান ঘটনাস্থল গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের নয়ানগর গ্রামে। সেখানে গিয়ে হৃদয়বিদারক বর্বরতার কথা জানতে পারেন। তাঁদের বর্ণনা শুনে এ প্রতিবেদকও ওই গ্রামে যান।
৯ জুন নিখোঁজ হলেও সজিব ওই গ্রামে যায় ১১ জুন রাতে। নিজ বাড়ি থেকে প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দূরে বারিষাব ইউনিয়নের নয়ানগর গ্রামে ঘোরাঘুরি করছিল সজিব। একপর্যায়ে রাত প্রায় ৯টার দিকে গ্রামের এক বাড়ির উঠানে ঢুকে পড়ে। বাড়িটি বীমা কম্পানির কর্মকর্তা মিনহাজ উদ্দিনের। সজিবকে দেখে ওই সময় ঘর থেকে চিত্কার করে ওঠে বাড়ির এক কিশোরী। বাড়ির লোকজন ঘর থেকে বেরিয়ে উঠানে তাকে দেখে ‘ডাকাত-ডাকাত’ বলে চিত্কার করলে ভয়ে পাশের গোয়ালঘরে ঢুকে পড়ে সজিব। এরপর বাড়ির প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে ওই গোয়ালঘরের ভেতরই পেটানো শুরু করে সজিবকে। ‘ডাকাত’ হানা দিয়েছে ভেবে ততক্ষণে বাড়ির সামনে লাঠিসোঁটা হাতে জড়ো হন গ্রামবাসী। পরে হাত-পা বেঁধে সজিবকে গ্রামবাসীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। লোকজন কিছু জানতে না চেয়েই বেধড়ক পিটুনি দিয়ে দুই পায়ে দড়ি বেঁধে উল্টো করে গাছের সঙ্গে ঝুলায় সজিবকে। গাছে ঝুলিয়ে ‘ডাকাত সহযোগীদের’ পরিচয় জানাতে বেধড়ক পেটানো অব্যাহত রাখে। নিষ্ঠুরতার জবাবে ছেলেটি দু-তিনবার শুধু জবাব দিয়েছিল ‘খিদা লাগছে’। ছেলেটির সরল জবাবে গ্রামবাসী আরো ক্ষিপ্ত হয়। পরে তারা মাটিতে ফেলে শাবল দিয়ে একটি চোখ উপড়ে তা নিয়ে উল্লাস করে। তারপর মাথা থেঁতলে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে টহল পুলিশ সেখানে পৌঁছায়।
ওই বাড়ির মালিক মিনহাজ উদ্দিন বলেন, তারাবির নামাজ পড়ছিলাম। বাড়িতে ডাকাত হানা দিয়েছে এমন খবরে ছুটে গিয়ে দেখি গ্রামবাসী এক ডাকাতকে ধরে গণপিটুনি দিচ্ছে। মিনহাজের ভাতিজা ইসমাইল হোসেন জানান, প্রথমে ঘরের ভেতর থেকে তার ভাগ্নি স্কুল ছাত্রী প্রথমে ‘ডাকাত’ বলে চিত্কার দেয়। ছুটে বাইরে বেরিয়ে উঠানে এক ছেলেকে দেখে তিনিও তখন ‘ডাকাত-ডাকাত’ বলে চিত্কার করেন। ওই সময় ছেলেটি বাড়ির গোয়ালঘরে ঢুকে পড়ে। চিত্কারে পাশের বাড়ি থেকে তার মামা হারুন-অর রশীদ ছুটে গিয়ে বাড়ির প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে গোয়ালঘরে ওই ‘ডাকাতকে’ বেদম পিটুনি দেন।
ইসমাইল হোসেন আরো জানান, ততক্ষণে টের পেয়ে বাড়ির সামনে গ্রামবাসী লাঠিসোঁটা হাতে জড়ো হয়। পরে আটক হওয়া ‘ডাকাতকে’ বাইরে নিয়ে গেলে গ্রামবাসী গণপিটুনি দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কথা : একদফা গণপিটুনি দিয়ে দুই পায়ে দড়ি বেঁধে উল্টো করে গাছের ডালে ঝুলিয়ে আটক হওয়া তরুণের কাছে তার ডাকাত সহযোগীদের নাম জানতে চাওয়া হয়। ওই সময় দু-তিনবার শুধু ওই তরুণ ‘খিদে লাগছে’ বলে বিড় বিড় করে বলে। পরে তাকে ‘ভয়ংকর ডাকাত’ বলে আখ্যা দিয়ে কোনো স্বীকারোক্তি না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত লোকজন ফের নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে শাবল দিয়ে তার ডান চোখ উপড়ে ফেলা হয়। এরপর থেঁতলে দেওয়া হয় মাথা।
প্রত্যক্ষদর্শী মুদি দোকানদার আবুল বাশার বলেন, প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় ধরে এমন অবর্ণনীয় নির্যাতন চললেও আটক হওয়া ওই তরুণ একটিও কথা বলেনি। এমনকি নড়াচড়াও করতে দেখিনি।
ওই গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে ওষুধ ব্যবসায়ী আবদুল বাতেন বলেন, আটক হওয়ার সময় ওই তরুণের হাতে কালো পলিথিনে মোড়া দুমুঠো মুড়ি ও ছোলা ছিল।
গণপিটুনির খবর পেয়ে কাপাসিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সেন্টুচন্দ্র সিংহের নেতৃত্বে টহল পুলিশ রাত ১১টার দিকে ঘটনাস্থল পৌঁছান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পুলিশ সেখানে গিয়ে সজিবকে নিস্তেজ অবস্থায় দেখেন। কিন্তু পুলিশের সামনেই কেউ কেউ নিস্তেজ সজিবের শরীরে লাঠি কিংবা শাবল দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করছিল। ওই সময় এসআই সেন্টুচন্দ্র সিংহ সজিবকে নাড়াচাড়া করে ‘বেঁচে আছে’ বলেন। তাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য একটি গাড়ির ব্যবস্থা করতে বলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য সেলিম প্রধানকে।
ইউপি সদস্য সেলিম প্রধান বলেন, ‘আমি ইঞ্জিনচালিত একটি রিকশাভ্যান (টমটম) ব্যবস্থা করে দিলে পুলিশ ওই রিকশাভ্যানে তুলে সজিবকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানায়, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা অবস্থান করে। এর মধ্যে আধঘণ্টা এসআই সেন্টুচন্দ্র সিংহ কাটান বীমা কর্মকর্তা মিনহাজ উদ্দিনের বাড়ির ভেতর। তখনো সজিবকে পেটানো হচ্ছিল।
এসআই সেন্টুচন্দ্র সিংহ দাবি করেন, ‘আমি ওই রাতে তরগাঁও, বারিষাব ও কড়িহাতা ইউনিয়ন এলাকায় টহল দায়িত্বে ছিলাম। আমার সঙ্গে ছিলেন কনস্টেবল মনিরুজ্জামান, সাইদুল ইসলাম, আয়নাল হোসেন, বিশেষ আনসার সদস্য দীপঙ্কর। থানার ডিউটি অফিসার মুঠোফোনে আমাকে রাত সাড়ে ১০টায় ডাকাত হানা দেওয়াসহ এক ডাকাতকে ধরে গণপিটুনি দেওয়ার খবর জানালে আমি ওই এলাকায় যাই।’
তবে তাঁর সামনে মারধর করা হয়নি দাবি করে এসআই সেন্টুচন্দ্র সিংহ বলেন, ‘আমি গিয়ে আটক হওয়া ডাকাতকে রক্তাক্ত নিস্তেজ অবস্থায় দেখতে পাই। ওই সময় বীমা কর্মকর্তা মিনহাজসহ তাঁর পরিবারের লোকজন দাবি করেছিল, সশস্ত্র ডাকাতদল তাদের বাড়িতে হানা দিয়েছিল। ডাকাতিকালে গ্রামবাসী ওই ডাকাতকে ধরে গণপিটুনি দেয়। ডাকাতদলের অন্য সদস্যরা পালিয়ে যায়।’
তবে বাড়ির ভেতর মিনহাজ উদ্দিনের সঙ্গে একান্তে দীর্ঘ সময় কথা বলার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ঘটনার তথ্য জানতে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলাম।
এদিকে ঘটনার পরদিন খবর পেয়ে নিহত ওই হতভাগা ছেলেটির স্বজনরা থানায় গেলেও মরদেহ দেখতে দেয়নি পুলিশ। এমনকি পুলিশ সজিবকে অজ্ঞাতপরিচয় ডাকাত বলে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে মরদেহ পাঠায়। পুলিশের কাণ্ড এখানেই থেমে থাকেনি, অজ্ঞাতপরিচয় ডাকাত গণপিটুনিতে নিহত হওয়ার ঘটনাসহ ডাকাতির চেষ্টা করায় পৃথক দুটি মামলাও নেন পুলিশ। পরে মর্গ থেকে শনাক্ত করে স্বজনরা মরদেহ নিয়ে গিয়ে দাফন করে।
স্বজনদের অভিযোগ, ঘটনার রাতেই নিষ্পাপ একজন মানসিক প্রতিবন্ধীকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানতে পারে পুলিশ। পরে মোটা অঙ্কের লেনদেনও হয়। এরপর পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পরও প্রতিবন্ধী অবোধ সজিবকে অজ্ঞাতপরিচয় ডাকাত বলেই মামলা নেয় পুলিশ।
খিরাটি বঙ্গতাজ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আওলাদ হোসেন জানান, সজিব ছিল খুবই মেধাবী ছাত্র। কিন্তু নির্বাচনী পরীক্ষার পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলায় ফরম পূরণ করা হয়নি তার।
ওই ঘটনায় দুটি মামলা : ঘটনার পরদিন রাতে ওই বীমা কর্মকর্তা মিনহাজ উদ্দিন বাদী হয়ে কাপাসিয়া থানায় সাত থেকে আটজন অজ্ঞাতপরিচয় ডাকাতকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করছেন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সেন্টুচন্দ্র সিংহ। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এসআই সেন্টুচন্দ্র সিংহ অজ্ঞাতপরিচয় ১০০ থেকে ১৫০ জন গ্রামবাসীকে আসামি করে আরেকটি মামলা দায়ের করে। এই মামলাটি তদন্ত করছেন উপপরিদর্শক (এসআই) শাহজাহান মিয়া। ওই মামলায় জাহিদুল ইসলাম সজিবকে অজ্ঞাতপরিচয় ডাকাত বলে বিবরণে উল্লেখ করেন। আর দুটি মামলায় সজিবের বয়স দেখানো হয়েছে ৩৫ বছর।
পুলিশের বক্তব্য : সজিবসহ সাত থেকে আটজন সশস্ত্র ডাকাতদল হানা দেওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সেন্টুচন্দ্র সিংহ বলেন, গণপিটুনিতে নিহত ওই ডাকাত ছাড়া অন্য কোনো ডাকাতকে কেউ দেখেনি। নিহতের সঙ্গে আরো কেউ ছিল কি না তারও কোনো প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না।
অন্যদিকে গণপিটুনিতে অজ্ঞাতপরিচয় ডাকাত নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শাহজাহান মিয়া বলেন, গণপিটুনিতে নিহত ডাকাতের পরিচয় এখনো নিশ্চিত করতে পারিনি। তবে লোকমুখে শুনছি, এটা নাকি পাগল ছিল। বিষয়টি বুঝতে পারছি না।
কাপাসিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘নিহত ডাকাতের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে, সে প্রকৃতই ডাকাত ছিল।’
গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
নিউজ - kalerkantho
গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে সজিব পাগল হয়ে গেছে। এমন বিপর্যয়ে তছনছ হয়ে যাওয়া স্বপ্ন দূরে ঠেলে পরিবারটি যখন সজিবকে সারিয়ে তোলার নতুন যুদ্ধ শুরু করেছে তখন অমানবিক বীভৎস চরম পৈশাচিক এক ঘটনা ঘটল। সবার অগোচরে বাড়ি থেকে চলে যাওয়া সজিবকে ‘ডাকাত’ বলে পিটিয়ে মেরে ফেলল পাশের গ্রামের কিছু লোক। ছেলে হারানোর মর্মান্তিক খবর ছাপিয়ে গণপিটুনির গা শিউরে ওঠা বর্ণনা শুনে গুমড়ে কাঁদছে পরিবারটি। সহযোগিতা চেয়ে উল্টো পুলিশের অমানবিক আচরণে তারা ভেঙে পড়েছে। তারা এখন সন্তানের এমন পরিণতির জন্য দায়ীদের বিচার চাইছে।
কাপাসিয়া উপজেলার ঘাগটিয়া ইউনিয়নের খিরাটি উত্তরপাড়া গ্রামের জাকির হোসেন মুকুলের সন্তান সজিব। জাকির পাশের খিরাটি বঙ্গতাজ ডিগ্রি কলেজের অফিস সহকারী ছিলেন। পারিবারিকভাবে সচ্ছল জাকির ২০১৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মারা যান। তিন ভাই-বোনের মধ্যে জাহিদুল ইসলাম সজিব ছিল সবার বড়।
স্বজনরা জানায়, জাহিদুল ইসলাম সজিব পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণি থেকে টেলেন্টপুলে বৃত্তি পায় । ২০১৪ সালে ঘাগটিয়াচালা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পাস করে সজিব। এরপর পাশের খিরাটি বঙ্গতাজ ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয় সে। এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে কলেজের নির্বাচনী পরীক্ষায়ও অংশ নিয়েছিল। কিন্তু এরপরই মানসিক সমস্যা দেখা দেয় তার।
সজিবের দাদি শুক্করি বেগম জানান, গত প্রায় তিন মাস আগে হঠাৎ সজিবের আচরণে অসংলগ্নতা ধরা পড়ে। কাউকে দেখলেই ভয় পেতে শুরু করে সে। প্রায়ই বাড়ির পাশে তার বাবার কবরের পাশে গিয়ে বসে থাকত। গুমরে কাঁদত। বেশির ভাগ সময় একা একা কথা বলত। এরপর ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দেয় সজিব। তবে কখনো কারো সঙ্গে খারাপ আচরণ করত না সে।
সজিবের দাদা বলেন, ‘সজিব ইদানীং খুব খেতে চাইত। খাবার নিয়ে গেলে খুশি হতো। হাতে খাবার দেখলে ছুটে আসত। রাতে তার ঘরে সে একাই থাকত। আমরা নিরাপত্তাজনিত কারণে তাকে আটকে রাখতাম। বাইরে থেকে শিকল দিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখতাম। ডাকলেই আমরা ছুটে যেতাম।’
গত ৯ জুন রাতে বারান্দার গ্রিল ভেঙে বেরিয়ে যায় সজিব। পরদিন সকালে সজিবের ঘরে তাকে না পেয়ে ব্যাপক খোঁজাখুঁজি করলেও তার কোনো হদিসই মেলেনি।
সজিবের নানা আরজু মিয়া জানান, গত ১২ জুন মেয়ে রেবেকা সুলতানা রেবা (সজিবের মা) প্রতিবেশী আলমগীর হোসেনসহ তিনি সজিবের নিখোঁজের ঘটনায় কাপাসিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে যান। সাধারণ ডায়েরি করার পর থানায় এক কনস্টেবলের মোবাইল ফোনে ‘গণপিটুনিতে নিহত অজ্ঞাতপরিচয় ডাকাতের’ মরদেহের ছবি দেখে ‘সজিব’ বলে চিত্কার দিয়ে সংজ্ঞা হারান রেবেকা সুলতানা রেবা। তিনিও ছবি দেখে বুঝতে পারেন সব শেষ হয়ে গেছে। তার আদরের নাতির করুণ মৃত্যু হয়েছে।
তাঁরা খবর পেয়ে ছুটে যান ঘটনাস্থল গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের নয়ানগর গ্রামে। সেখানে গিয়ে হৃদয়বিদারক বর্বরতার কথা জানতে পারেন। তাঁদের বর্ণনা শুনে এ প্রতিবেদকও ওই গ্রামে যান।
৯ জুন নিখোঁজ হলেও সজিব ওই গ্রামে যায় ১১ জুন রাতে। নিজ বাড়ি থেকে প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দূরে বারিষাব ইউনিয়নের নয়ানগর গ্রামে ঘোরাঘুরি করছিল সজিব। একপর্যায়ে রাত প্রায় ৯টার দিকে গ্রামের এক বাড়ির উঠানে ঢুকে পড়ে। বাড়িটি বীমা কম্পানির কর্মকর্তা মিনহাজ উদ্দিনের। সজিবকে দেখে ওই সময় ঘর থেকে চিত্কার করে ওঠে বাড়ির এক কিশোরী। বাড়ির লোকজন ঘর থেকে বেরিয়ে উঠানে তাকে দেখে ‘ডাকাত-ডাকাত’ বলে চিত্কার করলে ভয়ে পাশের গোয়ালঘরে ঢুকে পড়ে সজিব। এরপর বাড়ির প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে ওই গোয়ালঘরের ভেতরই পেটানো শুরু করে সজিবকে। ‘ডাকাত’ হানা দিয়েছে ভেবে ততক্ষণে বাড়ির সামনে লাঠিসোঁটা হাতে জড়ো হন গ্রামবাসী। পরে হাত-পা বেঁধে সজিবকে গ্রামবাসীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। লোকজন কিছু জানতে না চেয়েই বেধড়ক পিটুনি দিয়ে দুই পায়ে দড়ি বেঁধে উল্টো করে গাছের সঙ্গে ঝুলায় সজিবকে। গাছে ঝুলিয়ে ‘ডাকাত সহযোগীদের’ পরিচয় জানাতে বেধড়ক পেটানো অব্যাহত রাখে। নিষ্ঠুরতার জবাবে ছেলেটি দু-তিনবার শুধু জবাব দিয়েছিল ‘খিদা লাগছে’। ছেলেটির সরল জবাবে গ্রামবাসী আরো ক্ষিপ্ত হয়। পরে তারা মাটিতে ফেলে শাবল দিয়ে একটি চোখ উপড়ে তা নিয়ে উল্লাস করে। তারপর মাথা থেঁতলে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে টহল পুলিশ সেখানে পৌঁছায়।
ওই বাড়ির মালিক মিনহাজ উদ্দিন বলেন, তারাবির নামাজ পড়ছিলাম। বাড়িতে ডাকাত হানা দিয়েছে এমন খবরে ছুটে গিয়ে দেখি গ্রামবাসী এক ডাকাতকে ধরে গণপিটুনি দিচ্ছে। মিনহাজের ভাতিজা ইসমাইল হোসেন জানান, প্রথমে ঘরের ভেতর থেকে তার ভাগ্নি স্কুল ছাত্রী প্রথমে ‘ডাকাত’ বলে চিত্কার দেয়। ছুটে বাইরে বেরিয়ে উঠানে এক ছেলেকে দেখে তিনিও তখন ‘ডাকাত-ডাকাত’ বলে চিত্কার করেন। ওই সময় ছেলেটি বাড়ির গোয়ালঘরে ঢুকে পড়ে। চিত্কারে পাশের বাড়ি থেকে তার মামা হারুন-অর রশীদ ছুটে গিয়ে বাড়ির প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে গোয়ালঘরে ওই ‘ডাকাতকে’ বেদম পিটুনি দেন।
ইসমাইল হোসেন আরো জানান, ততক্ষণে টের পেয়ে বাড়ির সামনে গ্রামবাসী লাঠিসোঁটা হাতে জড়ো হয়। পরে আটক হওয়া ‘ডাকাতকে’ বাইরে নিয়ে গেলে গ্রামবাসী গণপিটুনি দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কথা : একদফা গণপিটুনি দিয়ে দুই পায়ে দড়ি বেঁধে উল্টো করে গাছের ডালে ঝুলিয়ে আটক হওয়া তরুণের কাছে তার ডাকাত সহযোগীদের নাম জানতে চাওয়া হয়। ওই সময় দু-তিনবার শুধু ওই তরুণ ‘খিদে লাগছে’ বলে বিড় বিড় করে বলে। পরে তাকে ‘ভয়ংকর ডাকাত’ বলে আখ্যা দিয়ে কোনো স্বীকারোক্তি না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত লোকজন ফের নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে শাবল দিয়ে তার ডান চোখ উপড়ে ফেলা হয়। এরপর থেঁতলে দেওয়া হয় মাথা।
প্রত্যক্ষদর্শী মুদি দোকানদার আবুল বাশার বলেন, প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় ধরে এমন অবর্ণনীয় নির্যাতন চললেও আটক হওয়া ওই তরুণ একটিও কথা বলেনি। এমনকি নড়াচড়াও করতে দেখিনি।
ওই গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে ওষুধ ব্যবসায়ী আবদুল বাতেন বলেন, আটক হওয়ার সময় ওই তরুণের হাতে কালো পলিথিনে মোড়া দুমুঠো মুড়ি ও ছোলা ছিল।
গণপিটুনির খবর পেয়ে কাপাসিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সেন্টুচন্দ্র সিংহের নেতৃত্বে টহল পুলিশ রাত ১১টার দিকে ঘটনাস্থল পৌঁছান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পুলিশ সেখানে গিয়ে সজিবকে নিস্তেজ অবস্থায় দেখেন। কিন্তু পুলিশের সামনেই কেউ কেউ নিস্তেজ সজিবের শরীরে লাঠি কিংবা শাবল দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করছিল। ওই সময় এসআই সেন্টুচন্দ্র সিংহ সজিবকে নাড়াচাড়া করে ‘বেঁচে আছে’ বলেন। তাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য একটি গাড়ির ব্যবস্থা করতে বলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য সেলিম প্রধানকে।
ইউপি সদস্য সেলিম প্রধান বলেন, ‘আমি ইঞ্জিনচালিত একটি রিকশাভ্যান (টমটম) ব্যবস্থা করে দিলে পুলিশ ওই রিকশাভ্যানে তুলে সজিবকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানায়, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা অবস্থান করে। এর মধ্যে আধঘণ্টা এসআই সেন্টুচন্দ্র সিংহ কাটান বীমা কর্মকর্তা মিনহাজ উদ্দিনের বাড়ির ভেতর। তখনো সজিবকে পেটানো হচ্ছিল।
এসআই সেন্টুচন্দ্র সিংহ দাবি করেন, ‘আমি ওই রাতে তরগাঁও, বারিষাব ও কড়িহাতা ইউনিয়ন এলাকায় টহল দায়িত্বে ছিলাম। আমার সঙ্গে ছিলেন কনস্টেবল মনিরুজ্জামান, সাইদুল ইসলাম, আয়নাল হোসেন, বিশেষ আনসার সদস্য দীপঙ্কর। থানার ডিউটি অফিসার মুঠোফোনে আমাকে রাত সাড়ে ১০টায় ডাকাত হানা দেওয়াসহ এক ডাকাতকে ধরে গণপিটুনি দেওয়ার খবর জানালে আমি ওই এলাকায় যাই।’
তবে তাঁর সামনে মারধর করা হয়নি দাবি করে এসআই সেন্টুচন্দ্র সিংহ বলেন, ‘আমি গিয়ে আটক হওয়া ডাকাতকে রক্তাক্ত নিস্তেজ অবস্থায় দেখতে পাই। ওই সময় বীমা কর্মকর্তা মিনহাজসহ তাঁর পরিবারের লোকজন দাবি করেছিল, সশস্ত্র ডাকাতদল তাদের বাড়িতে হানা দিয়েছিল। ডাকাতিকালে গ্রামবাসী ওই ডাকাতকে ধরে গণপিটুনি দেয়। ডাকাতদলের অন্য সদস্যরা পালিয়ে যায়।’
তবে বাড়ির ভেতর মিনহাজ উদ্দিনের সঙ্গে একান্তে দীর্ঘ সময় কথা বলার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ঘটনার তথ্য জানতে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলাম।
এদিকে ঘটনার পরদিন খবর পেয়ে নিহত ওই হতভাগা ছেলেটির স্বজনরা থানায় গেলেও মরদেহ দেখতে দেয়নি পুলিশ। এমনকি পুলিশ সজিবকে অজ্ঞাতপরিচয় ডাকাত বলে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে মরদেহ পাঠায়। পুলিশের কাণ্ড এখানেই থেমে থাকেনি, অজ্ঞাতপরিচয় ডাকাত গণপিটুনিতে নিহত হওয়ার ঘটনাসহ ডাকাতির চেষ্টা করায় পৃথক দুটি মামলাও নেন পুলিশ। পরে মর্গ থেকে শনাক্ত করে স্বজনরা মরদেহ নিয়ে গিয়ে দাফন করে।
স্বজনদের অভিযোগ, ঘটনার রাতেই নিষ্পাপ একজন মানসিক প্রতিবন্ধীকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানতে পারে পুলিশ। পরে মোটা অঙ্কের লেনদেনও হয়। এরপর পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পরও প্রতিবন্ধী অবোধ সজিবকে অজ্ঞাতপরিচয় ডাকাত বলেই মামলা নেয় পুলিশ।
খিরাটি বঙ্গতাজ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আওলাদ হোসেন জানান, সজিব ছিল খুবই মেধাবী ছাত্র। কিন্তু নির্বাচনী পরীক্ষার পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলায় ফরম পূরণ করা হয়নি তার।
ওই ঘটনায় দুটি মামলা : ঘটনার পরদিন রাতে ওই বীমা কর্মকর্তা মিনহাজ উদ্দিন বাদী হয়ে কাপাসিয়া থানায় সাত থেকে আটজন অজ্ঞাতপরিচয় ডাকাতকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করছেন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সেন্টুচন্দ্র সিংহ। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এসআই সেন্টুচন্দ্র সিংহ অজ্ঞাতপরিচয় ১০০ থেকে ১৫০ জন গ্রামবাসীকে আসামি করে আরেকটি মামলা দায়ের করে। এই মামলাটি তদন্ত করছেন উপপরিদর্শক (এসআই) শাহজাহান মিয়া। ওই মামলায় জাহিদুল ইসলাম সজিবকে অজ্ঞাতপরিচয় ডাকাত বলে বিবরণে উল্লেখ করেন। আর দুটি মামলায় সজিবের বয়স দেখানো হয়েছে ৩৫ বছর।
পুলিশের বক্তব্য : সজিবসহ সাত থেকে আটজন সশস্ত্র ডাকাতদল হানা দেওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সেন্টুচন্দ্র সিংহ বলেন, গণপিটুনিতে নিহত ওই ডাকাত ছাড়া অন্য কোনো ডাকাতকে কেউ দেখেনি। নিহতের সঙ্গে আরো কেউ ছিল কি না তারও কোনো প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না।
অন্যদিকে গণপিটুনিতে অজ্ঞাতপরিচয় ডাকাত নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শাহজাহান মিয়া বলেন, গণপিটুনিতে নিহত ডাকাতের পরিচয় এখনো নিশ্চিত করতে পারিনি। তবে লোকমুখে শুনছি, এটা নাকি পাগল ছিল। বিষয়টি বুঝতে পারছি না।
কাপাসিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘নিহত ডাকাতের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে, সে প্রকৃতই ডাকাত ছিল।’
গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
নিউজ - kalerkantho
No comments